বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর আহসান এইচ মনসুর বলেছেন, দেশের আর্থিক খাত বর্তমানে বড় ধরনের সংকটে নেই। এখন আর্থিক খাতে যে অবস্থা বিরাজমান, তা সম্পূর্ণরূপে সমাধানযোগ্য। ফলে বাংলাদেশ শ্রীলংকা বা অন্য কোনো দেশের মতো হওয়ার আশঙ্কা নেই। শনিবার (১৬ নভেম্বর) ঢাকার র্যাডিসন হোটেলে মাস্টারকার্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৪-এর বিজয়ীদের নাম ঘোষণা অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথির বক্তব্যে তিনি এসব কথা বলেন।
গভর্নর বলেন, 'আমাদের এক্সটার্নাল আর্থিক খাত ভালো অবস্থানে রয়েছে। ইতিমধ্যে আমাদের ব্যালান্স অব পেমেন্ট (বিপি) পরিস্থিতি উন্নত হয়েছে। ধারাবাহিক রিজার্ভ বাড়ছে, মুদ্রার বিনিময় হার স্থিতিশীল হয়েছে। সুতরাং, এক্সটার্নাল খাতে ঝুঁকির কোনো সম্ভাবনা আমি দেখছি না। আমাদের রপ্তানি আয় ও প্রবাসীদের রেমিট্যান্সের প্রবাহ বাড়ছে।'
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশ ব্যাংক এলসি খোলার ক্ষেত্রে সব ধরনের বিধিনিষেধ তুলে নিয়েছে। নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য আমদানির জন্য দেশের পর্যাপ্ত রিজার্ভ রয়েছে।
আহসান এইচ মনসুর বলেন, রাজনৈতিক পদ্ধতি ঠিক করা ছাড়া শুধু আর্থিক খাতকে ঠিক করা সম্ভব নয়। 'আর্থিক খাতে পুরোপুরি সুশাসন বাস্তবায়ন করার বিষয়টি কিছুটা সময়সাপেক্ষ। অন্তর্বর্তী সরকার স্বল্প সময়ের মধ্যে এটি পুরোপুরি হয়তো বাস্তবায়ন করতে পারবে না। তবে আমরা কাজগুলো শুরু করছি। '
গভর্নর আরও বলেন, মাত্র কয়েকটি ব্যাংকে তারল্য সংকট রয়েছে। তবে এটি কেটে যাবে।
'আমানতকারীরা কোনো সংকটে পড়বেন না। বাংলাদেশ ব্যাংক এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দিচ্ছে। দুর্বল ব্যাংকগুলোর খারাপ অবস্থা কাটাতে কিছু বড় পদক্ষেপ নিতে হতে পারে। তবে এসব সমস্যা কেটে যাবে, এ বিষয়ে নিশ্চয়তা দিচ্ছি,' বলেন তিনি।
তিনি বলেন, আমানতের প্রবৃদ্ধি আরও বাড়ানো দরকার। বর্তমানে আমানত প্রবৃদ্ধি রয়েছে ৭-৮ শতাংশ। ব্যাংকের ভালো স্বাস্থ্যের জন্য ১৫ থেকে ১৬ শতাংশ আমানত প্রবৃদ্ধি প্রয়োজন।
মাস্টারকার্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড
এদিকে শক্তিশালী ডিজিটাল অর্থনীতি গঠনে অবদান রাখার পাশাপাশি আর্থিক অন্তর্ভুক্তি সম্প্রসারণের জন্য মাস্টারকার্ড এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ড ২০২৪-এর বিজয়ীদের নির্বাচিত করা হয়েছে।
এ বছর ১৭টি ক্যাটাগরিতে মোট ২৬টি বিজয়ী প্রতিষ্ঠানকে এই পুরস্কার দেওয়া হয়েছে। দেশের ব্যাংকিং, পেমেন্ট ও ফিনটেক খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবদানের স্বীকৃতি হিসেবে এই অ্যাওয়ার্ড দেওয়া হয়।
বিজয়ীদের মধ্যে চার শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছে ব্র্যাক ব্যাংক ও ইস্টার্ন ব্যাংক। তিন শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছে সাউথইস্ট ব্যাংক, ঢাকা ব্যাংক, ইউনাইটেড কমার্শিয়াল ব্যাংক (ইউসিবি) ও মিউচুয়াল ট্রাস্ট ব্যাংক। দুই শ্রেণিতে পুরস্কার পেয়েছে এবি ব্যাংক, আল আরাফাহ ইসলামী ব্যাংক, দ্য সিটি ব্যাংক, ইসলামী ব্যাংক বাংলাদেশ, লংকাবাংলা ফাইন্যান্স, ন্যাশনাল ব্যাংক ও পূবালী ব্যাংক।
একটি করে পুরস্কার পেয়েছে স্ট্যান্ডার্ড চার্টার্ড ব্যাংক, ব্যাংক এশিয়া, বিকাশ, ডাচ-বাংলা ব্যাংক, এভারকেয়ার হাসপাতাল, গ্রামীণফোন, মিনা বাজার, প্রাইম ব্যাংক, আরএফএল বেস্ট বাই, ট্রান্সকম ইলেকট্রনিকস, শেয়ারট্রিপ, এসএসএল কমার্স ও বাংলাদেশ রেলওয়ের পোমেন্ট সেবা 'সহজ'।
ডিজিটাল পেমেন্ট গ্রহণে উৎসাহিত করার মাধ্যমে ব্যবসায়িক প্রতিষ্ঠান ও গ্রাহকদের মধ্যে ডিজিটাল-ফার্স্ট আচরণ গড়ে তোলা এই পুরস্কার প্রদানের লক্ষ্য।
আর্থিক খাতে বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের অবদানের স্বীকৃতি দিতে মাস্টারকার্ড ২০১৯ সাল থেকে এক্সিলেন্স অ্যাওয়ার্ডের আয়োজন করে আসছে।