১৭ অক্টোবর, ২০২৫

তরুণ সাহাবির সততা প্রতিষ্ঠায় আয়াত নাজিল!

তরুণ সাহাবির সততা প্রতিষ্ঠায় আয়াত নাজিল!

অধ্যক্ষ শিব্বির আহমদ ওসমানী: একজন তরুণ সাহাবীকে প্রায় সবাই 'ভুল/মিথ্যা' ভেবেছিলো, কিন্তু তাঁর সততার ব্যাপারে মহান আল্লাহ পবিত্র কুরআনে আয়াত নাজিল করেন। সেই মহমান্বিত সাহাবীর নাম যায়িদ ইবনে আরকাম রাদিয়াল্লাহু আনহু।

মুনাফিক সরদার আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই মুসলিমদের মধ্যে কীভাবে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করা যায় এই চিন্তায় থাকতো। সে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে ভালো সাজতো, কিন্তু আড়ালে তাঁর ব্যাপারে দোষারোপ করতো।

একবার সে বললো, মদীনায় গিয়ে মদীনার সম্মানিতরা লাঞ্চিত, বহিরাগতদের বের করে দিবে। অর্থাৎ, সে সম্মানিত, আর রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বহিরাগত (নাউজুবিল্লাহ)!

এই কথাটি শুনে ফেলেন তরুণ সাহাবী যায়িদ ইবনে আরকাম (রাঃ); যার বয়স ছিলো মাত্র ১৬ বছর।

আর আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই ছিলো ইসলাম-পূর্ব মদীনার নেতা হবার ক্যান্ডিডেট। সে ছিলো সম্মানিত। এজন্য সে রাসূলুল্লাহকে সহ্য করতে পারতো না।

ঐ সাহাবী যখন তার মুখে এমন কথা শুনলেন, তিনি সহ্য করতে পারলেন না। তিনি বললেন, 'আল্লাহর কসম! আমি এই কথা রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামকে বলে দেবো!"

একথা শুনে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই বললো, না, এটা বলো না। কিন্তু, সেই সাহাবী অনঢ়। তিনি বললেন, রাসূলের ব্যাপারে আমার বাবাও যদি এমন কথা বলতো, তবুও আমি বিচার দিতাম।

তরুণ সাহাবী রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের কাছে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইর ব্যাপারে বিচার দিলেন। তাঁর কথা শুনে রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম যাচাই করতে চাইলেন— এমন কথা সে আসলেই বলেছে? তোমার কোথাও ভুল হচ্ছে না তো?

তরুণ সাহাবী বললন, না ইয়া রাসূলাল্লাহ! আমার নিজের দুই কানে আমি শুনেছি।

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম ডেকে আনলেন আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইকে। জিজ্ঞেস করলেন, কী ব্যাপার? তুমি এমনটা বলছো? ঐদিকে উমর রাদিয়াল্লাহু আনহু প্রস্তুত, সত্যি হলে তিনি মুনাফিকের শাস্তি দিবেন।

আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই, কত্তো বড় মুনাফিক, সে আল্লাহর কসম করে বললো এরকম কথা সে কখনোই বলেনি, এই ছোট্ট ছেলেটা তার নামে মিথ্যা বলছে। তার কথা গুরুত্ব না দিতে।

তখন পর্যন্ত মদীনার লোকদের কাছে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাই এতোটা খারাপ ছিলো না; অর্থাৎ সে তখনো এক্সপোজড হয়নি।

যার ফলে সবাই এখন দোষারোপ শুরু করে এই তরুণ সাহাবীকে। কত্তো বড় সাহস? মদীনার এতো বড় নেতার ব্যাপারে মিথ্যাচার? এই বয়সে যদি এমন হয়, না জানি বড় হলে কী হবে!

এমনকি বড় বড় সাহাবীরা পর্যন্ত সেই কিশোর সাহাবীকে ধিক্কার জানাচ্ছিলেন।

বেশ মন খারাপ তাঁর। কই তিনি রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লামের সম্মান রক্ষার জন্য এই বয়সে বিচার দিলেন, সেখানে কিনা তাঁকেই দোষারোপ করা হচ্ছে!

একে তো রাসূলের অসম্মান শুনে কষ্ট, তারওপর এই মিথ্যা অপবাদ। আল্লাহর কাছে তিনি দুআ করতে লাগলেন, আল্লাহ যেন তাঁকে সাহায্য করেন।

এমন সময় রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে সুসংবাদ দিলেন। যেই যুবকের কথা সবাই মিথ্যা হিসেবে ধরে নিয়েছিলো, যাকে সবাই ধমক দিচ্ছে, ধিক্কার জানাচ্ছে, তাঁর পক্ষে কুরআনের আয়াত নাযিল করলেন স্বয়ং আল্লাহ সুবহানাহু ওতা'আলা!

রাসূলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম তাঁকে অভিনন্দন জানিয়ে বলেন— "যে যুবক! আল্লাহ তোমার কথার সত্যায়ন করেছেন!"

আল্লাহ পবিত্র কুরআনের 'সূরা মুনাফিকুন' নাযিল করে আব্দুল্লাহ ইবনে উবাইর মিথ্যাচার তুলে ধরেন, আর সেই সাহাবীর অভিযোগের সত্যায়ন করলেন।

তথ্যসূত্র: সহীহ বুখারী: ৪৯০০-৪৯০৫, সূরা মূনাফিকুনের তাফসীর।

 

✍️ অধ্যক্ষ শিব্বির আহমদ ওসমানী (কলাম লেখক, শিক্ষক ও গবেষক)