- সাইফুল খান
উপমহাদেশ বা ভারত নামকরণ বা ধারনাটির বহুল প্রয়োগ হয়েছে ব্রিটিশ জমানায়। এই অঞ্চলকে আরবরা নাম দিয়েছিলেন সিন্ধুস্তান বা হিন্দুস্তান। হিন্দুস্তানই এর অখণ্ড হয়ে ওঠার এক অলিখিত প্রস্তাবনা। ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র রাজ্য যা ছিলো একে অপরের শত্রু। এরকম রাজ্য, অঞ্চলকে মুসলমানেরা একত্রিত করে সুবিশাল রাষ্ট্র নির্মাণের শুরু করে ৮ম শতাব্দী থেকে। ইতিমধ্যেই আরবে মুসলিম রেনেসাঁস সম্পন্ন। অতএব মুসলিম ইতিহাসের শব্দচয়ন ও ঘটনার পরম্পরা বাদ দিয়ে আচমকা অখণ্ড ভারত বা উপমহাদেশ নামক নতুন নতুন শব্দের উপর ঈমান আনা ইতিহাসের নির্মাণের প্রতি মুনাফেকি।
হিন্দুস্তানের বাঙ্গালাহ ধারনা এবং সীমানা নির্ধারিত জাতি ও আঞ্চলিক জাতীয়তাবাদের সূত্রপাত তথা নামকরণ করেন সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ (রহঃ)। জাতিতে তিনি ইরানি এবং ভাষা ছিলো ফারসি। ধারনা করা যায় বাঙ্গালাহ শব্দটি হয়তো ফারসিরই কোন অপভ্রংশ। এছাড়া হিন্দুস্তানের রাজভাষা তথা অফিসিয়াল ভাষা ছিলো ফারসি। সাধারণত এ অঞ্চলে ইসলামী প্রশাসন কাঠামো নির্মিত হয়েছিলো ফারসি ভাষাভাষীদের হাত ধরেই। ফলে আমাদের ইতিহাসের উৎসের সন্ধান করতে হলে ফারসি ও আরবি ভাষায় অনুসন্ধান করতে হবে। যেহেতু বাঙ্গালাহ জাতীয়তাবাদের জনক সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ ( রহঃ) এবং তাঁর ভাষা ফারসি তাই বাঙালীর উৎসের সন্ধানে ফারসি কিতাবাদি গবেষণার দাবী রাখে। এছাড়া মুঘল জমানায় সম্রাট আকবর প্রতিষ্ঠা করেন বাংলা ফসলি সন। সেটাও আরবি মাসের উপর ভিত্তি ধরে তাই বাঙালি ও বাংলার নির্মাণের সুলুক সন্ধান করতে চাইলে ফারসির পাশাপাশি আরবিতেও দলিল দস্তাবেজ গবেষণায় হাত দিতে হবে।
এসব বিবেচনায় হিন্দুস্তানের বাঙালি মুসলমানদের ইতিহাস বহু ঘাত-প্রতিঘাত, আন্দোলন-সংগ্রাম ও রাজনৈতিক পরিবর্তনের ভেতর দিয়ে আজকের পর্যায়ে এসে পৌঁছেছে। বাংলার হাজার বছরের প্রবাদ পুরুষ সুলতান শামসুদ্দিন ইলিয়াস শাহ। এই তত্ত্বের উপর ঈমান থাকা জরুরী। ইলিয়াস শাহীর আমল থেকে আজকের দিন পর্যন্ত নানান ভাঙাগড়ার প্রত্যেকটি ঘটনাই যুগান্তকারী। আবার হিন্দুস্তানে ঔপনিবেশিক শাসনের সূচনাও হয়েছিলো বাংলার পরাজয়ের ভেতর দিয়ে।
হিন্দুস্তানের শাসক মুসলমান এবং শাসন ব্যবস্থা ইসলামী বা ইসলাম ঘেঁষা হওয়ায় পরাজয় ঘটেছিলো কেবলই মুসলমানদের। পরাজয়ের পরের ইতিহাস গবেষণা করলে দেখা যায় এই পরাজয়ে কেবল মুসলমানদেরই সকল ধরনের অস্তিত্বের পাটাতন ধ্বংস করে দেয়া হয়। তারই ধারাবাহিকতায় গোলামীর ২০০ বছরে মুসলমান হারিয়েছে তাদের ইতিহাস, সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, রীতি নীতি।
বাঙালি মুসলমানদের ইতিহাস নির্মাণকে জবরদস্তি করে প্রতিষ্ঠার চেষ্টা শুরু হয় ১৯৭১ সাল থেকে। সেটা শুরু করে মুসলিম থেকে স্বেচ্ছায় খারিজ হয়ে যাওয়া পরাজিত ফ্যাসিবাদ আওয়ামী লীগ। বাংলার মুসলমানদের ভাগ্যাকাশে গোলামীর তিলক পলাশীর প্রান্তরে যারা এঁকেছিলো আওয়ামী লীগ তারই লিগেসি বহন করে চলেছে। কায়েমি স্বার্থবাদী গোষ্ঠীর হাত থেকে আত্মমর্যাদা নিয়ে বাঁচতেই ধর্ম ও বিশ্বাসের ভিত্তিতে জন্ম নিয়েছিলো পাকিস্তান। বাঙালি মুসলমান ঈমানী চেতনা ধারণ করার প্রয়াসে সম্পূর্ণ নতুন এক জাতির সাথে মিলিত হয়ে অখণ্ড পাকিস্তান আন্দোলন সফল করেছে। সম্পূর্ণ নতুন এক জাতির সাথে ঐক্যবদ্ধ হওয়া অপরদিকে একই ভাষার অংশ হয়েও পূর্ব এবং পশ্চিম বাংলায় বিভক্ত হওয়া এটাই প্রমাণ করে এর পেছনে ছিলো ধর্মভিত্তিক স্বার্থ। যদিও পাকিস্তানীদের অত্যাচার, শোষণ, জুলুমের কারণে ধর্মীয় স্বাধীনতার সেই স্বপ্ন আর পূরণ না হওয়ায় অসংখ্য জীবনের বিনিময়ে রক্তের উপর দিয়ে স্বাধীনতার পথেই হাটতে হয়েছে বাঙ্গালি মুসলমানকে। ১৯৭১ সালের মহান স্বাধীনতার সকল অর্জনের মালিকানা নিয়ে গেছে ভারত। সেই থেকে ভারত হয়ে উঠেছে বাংলাদেশের ভাগ্য বিধাতা। করাচি থেকে ক্ষমতার কেন্দ্রবিন্দু গেছে দিল্লির হাতে। যে প্রচণ্ড আবেগ নিয়ে মর্যাদার লড়াই করে স্বাধীন হয়েছিলো এই জাতি। সেই স্বপ্নকে ধূলিসাৎ করার সকল ভারতীয় পরিকল্পনা বাস্তবায়নের দায়িত্ব নেয় আওয়ামী লীগ। আওয়ামী লীগের নেতৃত্বে মুক্তিযুদ্ধের যে বয়ান নির্মাণ করা হয়েছে সেটা মূলত ভারতেরই বয়ান। স্বাধীনতার ডাক এসেছে মেজর জিয়ার কণ্ঠে। সেনাবাহিনীর ব্যারাক থেকে। পুরো মুক্তিযুদ্ধের নেতৃত্বও দিয়েছে সেনাবাহিনী। স্বাধীনতার অকুতোভয় নাগরিক সৈনিকেরা ছিলেন ইসলাম বিশ্বাসী মুসলমান। অথচ আজ ভাসানী থেকে শুরু করে মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন অন্যান্য নেতাদের অস্বীকার করে একমাত্র আওয়ামী লীগের নেতৃত্ব ও ভারতের সহযোগিতার ইতিহাস দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতার পাটাতন নির্মাণ করেছে। আওয়ামী লীগের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় এরা সর্বদা খারিজে বিশ্বাস করে। ১৯৪৯ সালে মুসলিম লীগের গর্ভ থেকে জন্ম নেয় আওয়ামী মুসলিম লীগ। পরে ১৯৫৫ সালে এসে মুসলিম থেকে খারিজ করে নকশালপন্থী চেতনায় হয়ে ওঠে বামপন্থী আওয়ামী লীগ। যা বাঙালি মুসলিমদের চেতনায় পরিষ্কার কুঠারাঘাত। বাঙালি মুসলমানদের স্বপ্নভঙ্গের আনুষ্ঠানিক যাত্রা শুরু আওয়ামী লীগের জন্মের ভেতর দিয়ে। টুপি,দাড়ি, আলেম-ওলামা, মুসলিম পরিচয় সবই আওয়ামী চেতনার পরিপন্থী। সেই চতুর্দশ শতকে জন্ম নেয়া বাঙালি মুসলমানের চেতনাগত মুক্তি হাজার বছর পরেও আজো ঘটেনি। জুলাই বিপ্লব মূলত ফ্যাসিবাদের উপর বাঙালি মুসলমানিত্বের বিজয়। তাই হাজার বছরের লালিত স্বপ্নের স্ফুরণ ঘটাতে বাঙালি মুসলমানের রেনেসাঁসের এখনই সময়। বাঙালি মুসলমানের সংখ্যা সারা পৃথিবীতে কমবেশি ২৪-২৫ কোটি।সংখ্যাটা বিশাল। এই বিশাল সংখ্যার মানুষদের চিন্তা চেতনার নির্মাণ ছাড়া জাতিগত উন্নয়ন, আত্মমর্যাদা, স্বাধীনতা বোধের বিকাশ, অর্থনৈতিক মুক্তি সম্ভব না। গোলামীর মনন থেকে বেড়িয়ে এসে আত্মমর্যাদা সম্পন্ন জাতি গঠনে বাঙালি মুসলিম রেনেসাঁস ছাড়া সম্ভব নয়।
বর্তমান প্রেক্ষাপটে বাংলাদেশে শেখ হাসিনার শাসনব্যবস্থা, যা "হাসিনা রেজিম" নামে পরিচিত, দেশজুড়ে একটি বিতর্কিত অধ্যায় হয়ে উঠেছিলো। সমসাময়িক রাজনীতিতে ক্ষমতার এককেন্দ্রীকরণ, ভারতীয় আধিপত্যের প্রতি নতি স্বীকার, এবং বাঙালি মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী সার্বভৌমত্বের সংকটের প্রতীক হয়ে দাঁড়িয়েছিলো।
তবে, এই শাসনব্যবস্থার পতনে ভারতীয় আধিপত্যবিরোধী বাঙালি মুসলমান রেনেসাঁসের সম্ভাবনা ধীরে ধীরে স্পষ্ট হয়ে উঠছে। এই নিবন্ধে পরিবর্তনের রাজনৈতিক, সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক দিকগুলো প্রস্তাবনা আকারে বিশ্লেষণ করব ।
হাসিনা রেজিম:
শেখ হাসিনার নেতৃত্বে বাংলাদেশে আওয়ামী লীগ একটানা ক্ষমতায় ছিলো ২০০৯ সাল থেকে। এই দীর্ঘ সময়ে:
১.গণতন্ত্র সংকুচিত হয়েছে: বিরোধী দল দমন, নির্বাচনী কারচুপি এবং বিচার বিভাগের ওপর রাজনৈতিক নিয়ন্ত্রণ প্রতিষ্ঠা করেছে।
২. ভারতীয় হেজিমনির প্রতি নতি স্বীকার: বিশেষত সীমান্ত সমস্যায় নতিস্বীকার,পিলখানা হত্যাকাণ্ড এবং ভারতকে একতরফা করিডোর সুবিধা প্রদান নিয়ে জনগণের অসন্তোষ বাড়ছে।
৩ অর্থনৈতিক অসমতা: কয়েকজন সুবিধাভোগী শ্রেণির হাতে সম্পদ কেন্দ্রীভূত হওয়ায় সামাজিক অসন্তোষ বেড়েছে।
৪. ধর্মীয় সংবেদনশীলতা অবমূল্যায়ন: বাঙালি মুসলমানদের ঐতিহ্য ও সাংস্কৃতিক চেতনার সঙ্গে সামঞ্জস্যহীন নীতি গ্রহণ করেছে হাসিনা সরকার।
৫. সাংস্কৃতিক প্রভাব: ভারতীয় হেজিমনির পারপাস সার্ভ করার সকল পদ্ধতি অনুসরণ করেছে বাংলাদেশের নানান সাংস্কৃতিক গোষ্ঠী।
ভারতীয় হেজিমনি: একটি সংকটময় বাস্তবতা
বাংলাদেশের রাজনীতিতে ভারত দীর্ঘদিন ধরে প্রভাব বিস্তার করে আসছে। বিশেষত:
নদীর পানি বণ্টন সমস্যা: তিস্তা চুক্তি এখনো সম্পাদিত হয়নি, কিন্তু ফারাক্কা বাঁধের প্রভাবে বাংলাদেশের বহু অঞ্চলে খরা এবং পানির সংকট প্রকট। পানি শূন্য বাংলাদেশে নদী,খাল-বিল শেষ হওয়ার উপক্রম।
সীমান্ত হত্যাকাণ্ড: বিএসএফের হাতে বাংলাদেশি নাগরিকদের হত্যার ঘটনা আন্তর্জাতিক মানবাধিকার লঙ্ঘন হলেও হাসিনা সরকার কার্যকর প্রতিক্রিয়া দেখায় নাই বরং ভারতের তাঁবেদারি করেছে।
অর্থনৈতিক পরাধীনতা: ভারতীয় পণ্যের ওপর অতিরিক্ত নির্ভরশীলতা এবং বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে ভারতীয় কোম্পানিগুলোর প্রভাব বিস্তারে এদেশের অর্থনীতি পরমুখাপেক্ষী।
এই পরিস্থিতি বাঙালি মুসলমানদের মধ্যে নতুন করে জাতীয়তাবোধ এবং ভারতীয় আধিপত্যবিরোধী চেতনা জাগিয়ে তুলেছে।
বাঙালি মুসলমান রেনেসাঁস: নতুন দিগন্তের সূচনা
বাঙালি মুসলমান রেনেসাঁস বলতে একটি সাংস্কৃতিক, সামাজিক এবং রাজনৈতিক পুনর্জাগরণকে বোঝানো হচ্ছে, যা ভারতীয় আধিপত্য এবং আওয়ামী লীগের একচেটিয়া শাসনের বিরুদ্ধে মানুষের অধিকার পুনরুদ্ধার করবে। এই রেনেসাঁসের কয়েকটি বৈশিষ্ট্য হলো:
জাতীয়তাবোধের পুনর্জাগরণ
বাঙালি মুসলমান রেনেসাঁসের মূলমন্ত্র হবে আত্মপরিচয়ের পুনঃপ্রতিষ্ঠা। ধর্মনিরপেক্ষতার নামে মুসলমানদের ঐতিহ্যবাহী মূল্যবোধকে উপেক্ষা করা যে ভুল, তা মানুষ উপলব্ধি করেছে। স্বাধীন বাংলাদেশের মূলে থাকা ধর্মীয় এবং সাংস্কৃতিক ঐতিহ্যকে পুনরুজ্জীবিত করার প্রয়োজনীয়তা তৈরি হয়েছে।
ভারতীয় আধিপত্যের বিরোধিতা
এই নবজাগরণ ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে একটি শক্তিশালী আন্দোলন গড়ে তুলবে। এ আন্দোলনের লক্ষ্য হবে:
ক.সার্বভৌমত্ব পুনঃপ্রতিষ্ঠা
খ.সীমান্ত সমস্যার সমাধান
গ.পানি সম্পদ রক্ষা এবং
ঘ.অর্থনৈতিক স্বনির্ভরতা অর্জন।
রাজনৈতিক ব্যবস্থার গণতন্ত্রায়ন
হাসিনা রেজিমের পতনের সঙ্গে সঙ্গেই একটি নতুন রাজনৈতিক ধারা গড়ে উঠবে, যা জনগণের অংশগ্রহণ নিশ্চিত করবে। ব্যক্তি বা দলের চেয়ে রাষ্ট্রের জন্য কাজ করার রাজনীতি এ রেনেসাঁসের ভিত্তি হবে।
শিক্ষা ও সংস্কৃতির পুনর্গঠন
আধুনিক শিক্ষার পাশাপাশি ইসলামী ঐতিহ্যের উপর জোর দিয়ে একটি ভারসাম্যপূর্ণ শিক্ষাব্যবস্থা তৈরি হবে। এছাড়া বাংলা ভাষা, সাহিত্য, এবং সংস্কৃতিতে মুসলমানদের অবদান পুনরুদ্ধারের উদ্যোগ নেওয়া হবে। সেক্ষেত্রে আরবি, ফারসি ভাষায় ইতিহাসের দলিল-দস্তাবেজ অনুবাদ ও গবেষণায় হাত দিতে হবে। বাঙালি মুসলমানের দার্শনিক পাটাতন নির্মাণে আলী রা:, মাওলানা রুমি,ইমাম গাজ্জালী, ইবনে খালদুন,আল্লামা ইকবাল এবং নজরুলকে অপরিহার্য হিসেবে নিয়ে চিন্তার নির্মাণ করাটা খুবই প্রাসঙ্গিক। সেক্ষেত্রে আরবি,ফারসি,তুর্কি ভাষার দেশ সমূহের আর্কাইভসের সহযোগিতা নেয়া এবং ঐতিহাসিক দলিল দস্তাবেজ গবেষণায় হাত দিতে হবে। কাজটি সহজ করতে সকল মাদ্রাসাকে একেকটা গবেষণা সেন্টার করা যাবে। প্রত্যেক মাদ্রাসায় আরবি,ফার্সি,উর্দু,তুর্কি কিতাব পড়ানো হয়। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, পরিকল্পিত দিক নির্দেশনায় কম সময়ে দ্রুত গতিতে সেটা সম্ভব।
সম্ভাব্য নেতৃস্থানীয় গোষ্ঠী
বাঙালি মুসলমান রেনেসাঁসের নেতৃত্ব আসতে পারে বিভিন্ন গোষ্ঠী থেকে:
ইসলামী দলসমূহ: বিশেষত তারা, যারা আধুনিক শিক্ষার সাথে ধর্মীয় মূল্যবোধের সমন্বয় করতে সক্ষম।
নাগরিক সমাজ: শিক্ষাবিদ, সাংবাদিক, এবং মানবাধিকার কর্মীদের ভূমিকা গুরুত্বপূর্ণ হবে।
তরুণ প্রজন্ম: ডিজিটাল মাধ্যমে সংগঠিত একটি প্রজন্ম, যারা গণতন্ত্র এবং সার্বভৌমত্বের প্রতি প্রতিশ্রুতিবদ্ধ এবং যারা বিপ্লবের মাধ্যমে ফ্যাসিবাদের পতন ঘটিয়েছে।
অন্যান্য জনজাতি: অন্যান্য জাতিসত্তাকে এড়িয়ে যাওয়ার সুযোগ নেই। ১৮৩০ সালে কলকাতায় বাঙালির নামে যে হিন্দু রেনেসাঁর সূত্রপাত হয়েছিলো সেখানে বাকি জাতিসত্তাকে অস্বীকার করা হয়েছে। মুসলমানদের সেই সুযোগ নেই। অপরাপর সকল জাতিসত্তার চাহিদামত সুযোগ -সুবিধা রেখে পরিকল্পনা সাজাতে হবে। তারা তাদের পরিচয়ের স্বাতন্ত্র্য যাতে বজায় রাখতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে।
তবে এই নবজাগরণ সহজ হবে না। কয়েকটি বড় চ্যালেঞ্জ হলো:
আন্তর্জাতিক চাপ: ভারত এবং পশ্চিমা শক্তি এই আন্দোলনকে দমন করার চেষ্টা করতে পারে।
অভ্যন্তরীণ বিরোধ: রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে ঐক্যের অভাব বড় সংকট সৃষ্টি করতে পারে। তাই জুলাই বিপ্লবের রক্তের উপর দাড়িয়ে সকল দলের শপথ নিতে হবে বাংলাদেশে রাজনীতি করতে চাইলে ভারতীয় আধিপত্যবাদের বিরোধিতা, আওয়ামী ফ্যাসিবাদ বিরোধী ঈমান হাজির থাকতে হবে। নাহলে সে রাজনীতিই করতে পারবেনা। জুলাই বিপ্লবের সকল শহীদ,আহত,সৈনিককে রাষ্ট্র যথাযথ মর্যাদা দেবে যতদিন বাঙালি সত্ত্বা ও বাংলাদেশ টিকে থাকবে।
গণমাধ্যমের নিয়ন্ত্রণ: প্রোপাগান্ডার মাধ্যমে আন্দোলনকে বিভ্রান্ত করার প্রচেষ্টা করা গনমাধ্যমগুলোকে হয় বন্ধ করতে হবে নয়তো খোল-নলচে বদলে ফেলতে হবে।
বাংলাদেশে হাসিনা রেজিমের পতন কেবল একটি রাজনৈতিক পরিবর্তন নয়; এটি একটি বৃহত্তর সামাজিক এবং সাংস্কৃতিক পুনর্জাগরণের সূচনা করেছে। ভারতীয় আধিপত্যের বিরুদ্ধে বাঙালি মুসলমানদের ঐক্য এবং পুনর্জাগরণ একটি স্বাধীন, স্বনির্ভর এবং মর্যাদাপূর্ণ বাংলাদেশের ভিত্তি স্থাপন করবে।
এই রেনেসাঁস বাঙালি মুসলমানদের তাদের শেকড়ের কাছে ফিরিয়ে নিয়ে যাবে এবং একটি গণতান্ত্রিক ও সার্বভৌম বাংলাদেশের পথ আলোকিত করবে। এটি হবে বাঙালি মুসলমানদের ঐতিহ্য, ধর্ম, এবং আধুনিকতার মেলবন্ধনের একটি যুগান্তকারী অধ্যায়।
লেখক: ইতিহাস, রাজনীতি ও আন্তর্জাতিক বিশ্লেষক