ঢাকা: দেশের সংখ্যালঘু ইস্যুতে বস্তুনিষ্ঠ তথ্য সংগ্রহে ধর্মীয় নেতাদের সহায়তা কামনা করেছেন প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস। আজ বৃহস্পতিবার রাজধানীর সেগুনবাগিচায় ফরেন সার্ভিস একাডেমিতে দেশের বিভিন্ন ধর্মের শীর্ষস্থানীয় নেতাদের সঙ্গে আয়োজিত সংলাপের শুরুতে দেওয়া বক্তব্যে তিনি এ আহ্বান জানান।
দেশে ধর্মীয় সহিংসতার ইস্যু টেনে প্রধান উপদেষ্টা ড. মুহাম্মদ ইউনূস বলেন, ‘পত্র-পত্রিকায় দেখছি, মনে অনেকগুলো প্রশ্ন জেগেছে—সেই প্রশ্নের জবাব খুঁজে পাওয়ার জন্য আপনাদের সঙ্গে বসা।’
সরকার গঠনের আগে দেশে ফিরে বিমানবন্দরে দেওয়া বক্তব্যের কথা স্মরণ করিয়ে দিয়ে ড. ইউনূস বলেন, ‘তখন আমি বলেছিলাম, আমরা একটা পরিবার। আমাদের নানা মত, নানা ধর্ম থাকবে, নানা রীতিনীতি থাকবে, কিন্তু আমরা সবাই একই পরিবারের সদস্য। এটাতে জোর দিয়েছিলাম। আমাদের শত পার্থক্য থাকা সত্ত্বেও, আমরা পরস্পরের শত্রু নই। আমাদের জাতীয়তা, পরিচয়ের প্রশ্নে এক জায়গায় চলে আসি আমরা। আমরা বাংলাদেশি, এক পরিবারের সদস্য।’
প্রধান উপদেষ্টা বলেন, ‘শপথ গ্রহণের পরে শুনতে আরম্ভ করলাম, সংখ্যালঘুদের ওপর নির্যাতন হচ্ছে। তখন মনটা খারাপ হয়ে গেল। এর পরপরই আমি ঢাকেশ্বরী মন্দিরে গেলাম। সেখানেও বললাম, আমরা একই পরিবারের সদস্য। সব দাবিদাওয়া বাদ দিলেও একটা দাবি পরিষ্কার, আমাদের সকলের সমান অধিকার, বলার অধিকার, ধর্মের অধিকার, কাজকর্মের অধিকার। সেটা এসেছে সংবিধান থেকে। এটা সবার নাগরিক হিসেবে প্রাপ্য, রাষ্ট্রের দায়িত্ব সেটা নিশ্চিত করা। শুনলাম, এখনো সংখ্যালঘুদের ওপর হামলা হচ্ছে। তাই আমি সবাইকে নিয়ে বসলাম, এটা থেকে কীভাবে উদ্ধার পাওয়া যায়।’
দুর্গাপূজায় নিরাপত্তায় সরকারের উদ্যোগের কথা তুলে ধরেন প্রধান উপদেষ্টা। তিনি বলেন, ‘সেটা পুরো জাতীয় উৎসবে পরিণত হয়েছিল। তখন তৃপ্তি পেলাম, একটু তো কাজ করেছি।’ তিনি বলেন, ‘এখন আবার নতুন কথা, হামলা হচ্ছে, অত্যাচার হচ্ছে। বিদেশি গণমাধ্যম বলব না, প্রচারমাধ্যমে প্রচারিত হচ্ছে—এমনটা হচ্ছে। আমি খোঁজ নিচ্ছি, কী হচ্ছে? সবদিকে দেখলাম এটা হচ্ছে না।’
তিনি আরও বলেন, ‘এক খবরে বলা হচ্ছে, হচ্ছে; আরেক খবরে বলা হচ্ছে, হচ্ছে না। তথ্যের মধ্যে ফারাক আছে। এটা ঠিক না। এটার অবসান হতে হবে। আমরা যে তথ্য পাচ্ছি, তা ভুল হতে পারে। তথ্যের ওপর বসে থাকার কিছুই নাই, এটার অর্থ—অন্ধের মতো বসে থাকা। ভেতরে গিয়ে দেখতে হবে। খোঁজ নিতে হবে তথ্যের গরমিল কেন? তাতে ওরা যা বলছে, তা কি মিথ্যা প্রচার? না, আমরা যা বলছি—তা মিথ্যা প্রচার। সত্যটা কোথায়?’
ড. ইউনূস বলেন, ‘আমাদের লক্ষ্যের কোনো ফারাক নেই। সেখানে সঠিক তথ্য কীভাবে পাব, সেটা আমাদের জানার দরকার। অনেক সময় সরকারি তথ্যের ওপর ভরসা করে লাভ নেই। কারণ, কর্তা যা চায়, সেভাবে বলে। আসলটা মন খুলে বলতে চায় না। আমরা আসল খবরটা জানতে চাই, সেই প্রক্রিয়াটা প্রতিষ্ঠিত করতে চাই। এত বড় দেশে যেকোনো ঘটনা ঘটতে পারে, কিন্তু প্রকৃত তথ্য জানতে চাই। তাৎক্ষণিক খবর পেলে যাতে সমাধান করা যায়। দোষী দোষীই। তাকে বিচারের আওতায় আনা সরকারের দায়িত্ব।’